স্বামী বিবেকানন্দ
১. দর্শন ও ভাবনার প্রভাব:
স্বামী বিবেকানন্দের নিঃস্বার্থ সেবা, জাতীয়তাবাদ এবং আধ্যাত্মিক শক্তির বাণী সুবাসচন্দ্র বসুর মধ্যে গভীরভাবে অনুরণিত হয়েছিল। বিবেকানন্দের জাগ্রত ভারতের স্বপ্ন বসুকে ভারতের স্বাধীনতাকে এক পবিত্র কর্ম হিসেবে দেখতে অনুপ্রাণিত করেছিল।
"ভয়হীন হও" এবং "অন্তরের শক্তি অর্জন করো"—বিবেকানন্দের এই শিক্ষা বসুর সাহসী ও আপসহীন সংগ্রামের মূল ভিত্তি।
২. যুবশক্তি জাগরণ:
স্বামীজির ভারতের যুবসমাজকে দেশের পরিবর্তনের দূত হিসেবে গড়ে তোলার আহ্বান বসুকে অনুপ্রাণিত করেছিল, এবং তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামে যুবসমাজকে একত্রিত করেন।
৩. বিশ্বজনীন ভ্রাতৃত্ববোধ:
বিবেকানন্দের ধর্মীয় সম্প্রীতি ও বিশ্বজনীন ভ্রাতৃত্ববোধের আদর্শ বসুকে সকল ধর্মের মানুষের মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলার জন্য উৎসাহিত করেছিল।
---
সিস্টার নিবেদিতা
১. জাতীয়তাবাদ:
সিস্টার নিবেদিতা, স্বামী বিবেকানন্দের শিষ্যা, ভারতীয় ঐতিহ্য ও সভ্যতার গৌরব প্রচার করেছিলেন। তাঁর চিন্তা সুবাসচন্দ্র বসুর মধ্যে গভীর প্রভাব ফেলেছিল।
নিবেদিতার লেখনী ও কর্মকাণ্ড দেশপ্রেম ও আত্মত্যাগের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছিল, যা বসুর জীবনে ও কাজের দর্শনে গভীরভাবে প্রভাব ফেলেছিল।
২. শিক্ষা ও ক্ষমতায়ন:
সিস্টার নিবেদিতার শিক্ষা ও জাতীয় ক্ষমতায়নের ওপর জোর দেওয়া বসুর মতাদর্শের অংশ হয়ে ওঠে। তিনি বিশ্বাস করতেন যে শিক্ষিত এবং সচেতন জনগণ ভারতের অগ্রগতির জন্য অপরিহার্য।
৩. আদর্শ ত্যাগের দৃষ্টান্ত:
ভারতীয় জাতীয়তাবাদের জন্য নিবেদিতার পূর্ণ আত্মত্যাগ বসুর কাছে এক বিশিষ্ট অনুপ্রেরণা ছিল। তাঁর জীবনই বসুর কাছে জাতীয়তার জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করার প্রতীক হয়ে ওঠে।
---
রামকৃষ্ণ মিশন
১. আধ্যাত্মিক ভিত্তি:
শ্রী রামকৃষ্ণ এবং স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শে প্রতিষ্ঠিত রামকৃষ্ণ মিশনের ধর্মীয় সম্প্রীতি, নিঃস্বার্থ সেবা এবং সাধারণ মানুষের উন্নয়নের শিক্ষাগুলি বসুর মধ্যে গভীর প্রভাব ফেলেছিল।
২. জাতীয় সেবার প্রেরণা:
"মানব সেবা হল ঈশ্বরের সেবা"—রামকৃষ্ণ মিশনের এই ধারণা বসুর জীবনে এক গভীর অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল। তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামকে এক পবিত্র কর্তব্য বলে মনে করতেন।
৩. অন্তরের শক্তির বিকাশ:
রামকৃষ্ণ মিশনের আদর্শের ভিত্তিতে চরিত্র ও মননের আধ্যাত্মিক বিকাশ বসুর বিপ্লবী সংগ্রামে সাহস ও দৃঢ়তা এনে দিয়েছিল।
---
নেতাজির জীবনে এই প্রভাবগুলির বাস্তব প্রতিফলন
সুবাসচন্দ্র বসু স্বামী বিবেকানন্দকে নিজের আধ্যাত্মিক গুরু হিসেবে মানতেন এবং সর্বদা তাঁর রচনা, বিশেষ করে কর্মযোগ ও কলকাতা থেকে আলমোড়া পর্যন্ত ভাষণ সঙ্গে রাখতেন।
তিনি একবার বলেছিলেন, "স্বামীজী প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য, ধর্ম ও বিজ্ঞান, অতীত ও বর্তমানকে একসূত্রে গেঁথেছেন। আজকের ভারতে আমাদের এক্ষুণি এটাই প্রয়োজন।"
সেবা, আত্মত্যাগ এবং আধ্যাত্মিকতার যে আদর্শ তিনি গ্রহণ করেছিলেন, তা তাঁর জাতীয়তাবাদী আন্দোলন এবং ব্যক্তিগত মূল্যবোধে প্রতিফলিত হয়েছিল।
উপসংহার
স্বামী বিবেকানন্দ, সিস্টার নিবেদিতা এবং রামকৃষ্ণ মিশনের আদর্শ সুবাসচন্দ্র বসুকে একদিকে একজন বিপ্লবী নেতা হিসেবে গড়ে তুলেছিল, অন্যদিকে একজন আধ্যাত্মিকভাবে জাগ্রত ব্যক্তি হিসেবে নির্মাণ করেছিল।